অসাধারন একটা মুভি গ্রুপ। প্রায় সব ইউজাররা একটিভ। নিয়মিত তারা বিভিন্ন মুভি শেয়ার করে হেল্প করছে পাশাপাশি হেল্প নিচ্ছে। চলছে আলোচনা। চলছে তর্ক। সবাই গ্রুপের নিয়ম মেনে গ্রুপ্টাকে নিজের মতো ভালোবেসেছে। যা আমাদের যারা মুভি দেখি তাদের জন্য কতো প্রয়জনিয় তা বলার বাইরে। আপনি চাইলেই এই গ্রুপের সদস্য হতে পারেন। আপনিও আপনার পছন্দের মুভিটি শেয়ার করতে পারেন। জেনে নিতে পারেন অন্যদের ভালোলাগার মুভি। আলোচনা করতে পারেন।চ শুধু এক্টিভ থাকার চেস্টা করবেন।গ্রুপের নিয়মকানুন মেনে চলুন। মুভি লাভার এখানে কিল্ক করে আমাদের প্রিয় গ্রুপের সদস্য হয়ে যান

একটি মরা গরুর তাজা কাহিনি -রম্য রচনা

একটা সময় ছিল, যখন গৃহস্থ বা কৃষকের গরু মারা গেলে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হতো। এখন আর সেটা হয় না। তারা অনেক সচেতন হয়েছে। মরা গরু মাটি চাপা দেয়।
সেই সময় ভাসিয়ে দেওয়া মরা গরু ফুলে উঠত। আশপাশে দুর্গন্ধ ছড়াত। গরু ভাসতে ভাসতে চলে যেত ভাটির দিকে। নদী ব্যবহার করা মানুষের অসুবিধা হলেও সুবিধা হতো ঋষিদের।
আমাদের পাশের গ্রামে ছিল ঋষিপল্লি। এখনো আছে। তারা ঢাকঢোল বাজিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত। তবে এখন অনেকের পেশা বদল হয়েছে।

ছোটবেলায় নিম্নবিত্ত সেই ঋষিদের মধ্যে দেখেছি মরা গরু নিয়ে চরম উৎসাহ। কৃষকের গরু মরলেও লাভ হতো ঋষিদের। মরা গরু থেকে চামড়া ছাড়িয়ে নিয়ে সেটা অন্যত্র বিক্রি করত।
মরা গরুর চামড়ার মালিক হওয়ার একটা প্রক্রিয়া ছিল। সেটা বলি।
হয়তো দেখা গেল ইছামতী নদী দিয়ে কোনো মরা গরু ভেসে যাচ্ছে। সেই খবর যেই তাদের কানে পৌঁছাত, অমনি বাড়ির পুরুষ ঋষিরা ছুটত নদীর দিকে। এমন ছুটে যাওয়া দেখেছি অনেকবার। আমাদের বাড়ির সামনের মেঠো পথ দিয়ে তাদের প্রাণপণ ছুটে যাওয়া।
হয়তো কয়েক বাড়ির পুরুষ সদস্যরা ছুটে যেত সেদিকে। নদীর তীরে পৌঁছে তারা ঢিল ছুড়তে থাকত মরা গরুর দিকে। যার হাতের ঢিল গিয়ে লাগত গরুর শরীরে, সে-ই গরুর চামড়ার মালিক হয়ে যেত। তারপর সেটা তীরে এনে চামড়া ছাড়ানোর উৎসব হতো। যাদের ঢিল গরুর গায়ে লাগেনি তারাও কেউ কেউ বলার চেষ্টা করত, আমার ঢিলটা আসলে গরুটার লেজে লেগেছে। কেউ আবার বলত, আমারটা লেগেছে গরুর পায়ে। ভাগ বসানোর ধান্দা আর কি! তবে প্রকৃত মালিকের দয়া হলে তাদের যৎসামান্য কিছু দেওয়াও হতো।
চামড়া ছাড়ানোর পর সেই গরুর ওপর এসে বসত শকুনের পাল। শুরু হতো তাদের মাংস খাওয়ার মহোৎসব। এখন এত গরু মরে না। অসুস্থ হলেই তাকে স্থানীয় পশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় বা মরলে নদীতে তা দেখতে পাওয়া যায় না।
গরু না মরলেও দেশ মরে। ঠিক গরুর মতোই। এখন মরছে। সেই দেশটির নাম লিবিয়া। মরা গরুর মতোই যেই ফুলে উঠেছে, অমনি ঋষিদের মতো আরব জাহানের দিকে ছুটতে শুরু করেছে—আমেরিকা, ফ্রান্স, ব্রিটেন ডট ডট ডট…। কে আগে লিবিয়ার গায়ে ঢিল ছুড়তে পারে। মানে বোমা ফেলতে পারে। যে আগে ফেলতে পারবে, লিবিয়া তার। আর লিবিয়া মানেই তো লিবিয়ার তেল। অবশ্য ব্যাপারটা আসলে অত সহজও নয়। মূল ভাগ আমেরিকারই থাকবে। বড় কর্তা হিসেবে বলে রেখেছে, ভাগ চাস তো তাড়াতাড়ি বোমা ফেল। সে কথায় অনেকে কান দিয়েছে।
এখনো স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে ইরাকের কথা। ইরাকও মরা গরুর মতো ফুলে উঠেছিল। ইরাকের গায়ে প্রথম ঢিল ছুড়েছিল বুশ, আমেরিকা। ইরাক হয়েছিল তার। ভাগ অবশ্য অন্যরাও পেয়েছিল।
এখন যে যার মতো ঢিল ছুড়ছে লিবিয়ার গায়ে। ওবামা বলছে, আমি কি আর একা খাব নাকি। তোদের কি ভাগ দেব না!
আমার মনে পড়ছে ছোটবেলার কথা। একটি মরা গরু ভেসে যাচ্ছে ইছামতী নদী দিয়ে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ০৪, ২০১১

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন