অসাধারন একটা মুভি গ্রুপ। প্রায় সব ইউজাররা একটিভ। নিয়মিত তারা বিভিন্ন মুভি শেয়ার করে হেল্প করছে পাশাপাশি হেল্প নিচ্ছে। চলছে আলোচনা। চলছে তর্ক। সবাই গ্রুপের নিয়ম মেনে গ্রুপ্টাকে নিজের মতো ভালোবেসেছে। যা আমাদের যারা মুভি দেখি তাদের জন্য কতো প্রয়জনিয় তা বলার বাইরে। আপনি চাইলেই এই গ্রুপের সদস্য হতে পারেন। আপনিও আপনার পছন্দের মুভিটি শেয়ার করতে পারেন। জেনে নিতে পারেন অন্যদের ভালোলাগার মুভি। আলোচনা করতে পারেন।চ শুধু এক্টিভ থাকার চেস্টা করবেন।গ্রুপের নিয়মকানুন মেনে চলুন। মুভি লাভার এখানে কিল্ক করে আমাদের প্রিয় গ্রুপের সদস্য হয়ে যান

 লিখেছেন ঃ      sraboni
প্রথম প্র্কাশ ;     সামু ব্লগ
বিবর্ণ সময়ের হাত ধরে আসে অন্ধকার নাকি আলোর সাথে হেঁটে হেঁটে আসে অন্ধকার? মাথায় ঢুকছে না ব্যাপারটা। আজ বিকেল থেকে এই প্রশ্নটা মাথায় পোকার মত কুটকুট করে কামড়াচ্ছে। বাড়ী ফিরতে ইচ্ছে করছে না। বাড়ী মানে তো সেই অশান্তির কুঞ্জ। ভাল লাগে না আর। সারাদিন হা করা অভাব আর টাকার চিন্তায় পাগল মানুষগুলোর উত্তপ্ত বাক্যালাপে ক্লান্ত লাগে খুব।
তার চেয়ে এই ভাল পার্কে বসে উদাস বাতাসের সাথে বিলীন হওয়া। কি যে এক অদ্ভুদ শূণ্যতা বুকের ভেতর!
আজ প্রায় তিন বছর হতে চলল পাশ করেছি। একটা ভাল চাকরীর জন্য কোথায় না কোথায় ঘুরছি! কিন্তু ভাগ্য বিধাতার বুঝি প্রষন্ন হতে মন চাইছে না। মায়ের খুব অসুখ। বাবার বয়স হয়েছে। ছোট ছোট দুটি ভাই বোন আছে। সবাই চেয়ে আছে আমার দিকে। একটা সুপার ষ্টোরে পার্ট টাইম কাজ করি। হিসাব পত্র দেখি। সারাদিন কেটে যায় চাকরী খুঁজে আর টিউশনী করে। এই করে যে ক'টা টাকা পাই মায়ের হাতে তুলে দেই। প্রতিদিন বাড়ী ফেরার পর সব গুলো মানুষের অপেক্ষমান জ্বলজ্বলে চোখের দিকে তাকাতে পারি না। মাথা নিচু করে চলে যাই নিজের রুমে। মা আস্তে আস্তে এসে কাছে দাঁড়াবে নিচু স্বরে জানতে চাইবে ' কিছু উপায় হলো রে শিমু?'
রোজকার মতই আমি বলব ' না মা হয়নি।' মায়ের নিভে যাওয়া মুখের দিকে চাইতে পারি না। বন্ধ বাথরুমের দেয়ালে আছড়ে পড়ে শুধু কান্নার ঢেউ।
চাইলেও এসব থেকে পালাতে পারি না আমি। কখন যেন দু'ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে নিজের অজান্তেই। আজ নিভার সাথে দেখা হয়েছিল। আমি যে ষ্টোরে কাজ করি ওখানে। কিছু কেনাকাটা করে কাউন্টারে এসেছিল। দু'চোখ উপচে পড়া বিস্ময় নিয়ে জানতে চাইল ' কিরে তুই এখানে? চাকরী করিস নাকি?!'
উজ্জ্বল হাসি দিয়ে বলি 'হ্যাঁ। কেমন আছিস?'
'এই তো ভাল। তোর এ কি অবস্থা?! এমন হয়ে গেছিস কেন দেখতে?'
'কি অবস্থা? কই ঠিকই তো আছি।'
' না রে আগের চেয়ে অনেক মোটা হয়েছিস।'
'তাই।'
দ্রুত বিল করে দিই। টাকা গুনে চেঞ্জ ফেরত দিয়ে হাসি মুখে তাকাই। হাসিতে বুঝিয়ে দিই ব্যস্ততা। নিভা হাত নেড়ে চলে যায়।
তারপর থেকে আর কাজ উঠছে না হাতে। কিছুতেই মনো্যোগ দিতে পারছি না। হিসাব ভুল হলো দু'বার। কাষ্টোমারের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলাম। ম্যানেজার এসে দাঁড়ালো পাশে। ' কি হয়েছে শিমু? শরীর খারাপ লাগছে নাকি?'
' না কাশেম ভাই। ঠিক আছি।'
' চা খাবে?'
' খাওয়া যায়।'
'এই লাভলু চা আন তো দু'কাপ।'
ম্যানেজারের এত সহানুভুতির অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝেও না বোঝার ভান করে থাকি। কাশেম ভাই প্রায় সময় কাজ ফেলে চেয়ে থাকেন আমার দিকে। অন্তরঙ্গ হতে চায়।
এই কি চেয়েছিলাম আমি?! নিজের জীবনটার প্রতি ঘৃনা চলে এসেছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে আর বসে থাকা নিরাপদ না। ধীর পায়ে পার্ক থেকে বের হয়ে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। কে যেন এসে পাশে দাঁড়ায়। কি মনে হতে পাশের মানুষটির দিকে তাকাই। একজন বয়স্ক মানুষ। হাসি মুখে চেয়ে আছে।
' কি নাম তোমার?' গুরুগম্ভীর কন্ঠে জানতে চায়।
একটু অস্বস্তির মাঝে পড়ে যাই। এই রকম সময়ে কেউ নাম ধাম জানতে চাইলে বুঝতেই হবে কোন বদ মতলব আছে। কেন যে এতটা সময় পার্কে বসে থাকলাম?! নিজের উপরই রাগ হচ্ছে এখন খুব। কি ভেবেছে বুড়োটা কে জানে! বাস আসছে না কেন?
' এই মেয়ে তোমাকে বলছি। কি নাম তোমার?' ফের জানতে চাইল লোকটা।
' শিমু।' নিজের অজান্তেই বলে ফেললাম নামটা।
' তোমার প্রশ্নের উত্তর পেলে?'
' মানে?!'
' ওই যে আলোর সাথে অন্ধকার আসে নাকি বিবর্ণতার সাথে আসে?'
বিস্ময়ে পুরো স্তব্ধ হয়ে যাই। আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লেও এতটা আশ্চর্য হতাম কি না জানি না। আমার জানা মতে এই প্রশ্নটা নিয়ে কারো সাথে কথা বলিনি। কারন যখন পার্কে ঢুকলাম তখনই ওটা মাথায় এলো। কিন্তু এই মানুষটি জানল কেমন করে?!
'আপনি কি বলছেন আমি বুঝতে পারছি না।' বলে আর দাঁড়ালাম না। হনহন করে হাঁটতে শুরু করলাম। একটা রিকশাও নাই। পিছন ফিরে তাকিয়ে বুকের ভেতরটা হিম হয়ে গেল। বুড়োটা একদম আমার পিছনে পিছনে আসছে। এ কোন ঝামেলা বাঁধলো!
আবারও মনে মনে নিজেকে কষে গালাগাল করলাম।
হাঁটা বাড়িয়ে দিলাম আরও। বুড়োটা কেমন কেমন করে ঠিকই আমার পাশে চলে এলো। আবারও সেই হাসিমুখ। ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে আমার। কি চায় লোকটা? দালাল না তো?
' শিমু এত ভয় পেয়েছো কেন? আর যাচ্ছো কোথায়? এদিকে তো কিছু পাবে না খুঁজে। তুমি উল্টোদিকে চলে এসেছো।' বুড়োটার কথা শুনে সম্বিত ফিরে পাই। আসলেই তো উল্টো দিকে চলে এসেছি। মানুষটা থেমে দাঁড়িয়ে আছে। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি বাস এসেছে। একটা দৌঁড় দিলাম। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। বাস স্ট্যাণ্ডে আসতে আসতে বাস ছেড়ে দিল। কখন যেন লোকটাও এসে দাঁড়িয়েছে পাশে।
'শিমু বললে না তো প্রশ্নের উত্তর পেলে কি না।'
উফফ!! লোকটা জ্বালাচ্ছে কেন? ভীষন রেগে যাই আমি।
' আপনি যান তো!'
' উত্তরটা আমি জানি। বলব?'
' আচ্ছা কি ব্যাপারটা কি? আপনার সমস্যা কি? আপনি আমার পিছে লেগে আছেন কেন?'
' বলব কি না বল।' লোকটা যেন শুনেও শুনতে পেল না আমার প্রশ্ন গুলো।
' আমার কোন প্রশ্ন নাই। আর দয়া করে এখান থেকে যান।'
' মিথ্যে বলছ কেন শিমু? সারা বিকেল তোমাকে এই প্রশ্নটা জ্বালিয়েছে কি না বল?'
' আপনি জানলেন কেমন করে? আপনাকে তো আমি বলিনি।'
' হুম তা বলনি । তবে তুমি যখন পার্কে ঢুকলে তখনই তো ওটা এলো তাই না। আর আমিও শুনতে পেলাম।'
' কিন্তু কিভাবে?!'
' সেটা জানা কি খুব জরুরী শিমু? উত্তরটা জানা তোমার জন্য জরুরী। তাই জানতে এলাম কিছু খুঁজে পেলে কি না।'
' আপনি যদি শুনেই থাকেন প্রশ্নটা তাহলে এটাও নিশ্চয় জানেন যে কিছু খুঁজে পাইনি।' অস্থির লাগছে এখন। রাত হয়ে যাচ্ছে অথচ এখন পর্যন্ত বাস আসছে না। এমন কি রিকশাও না। মা নিশ্চয় চিন্তা করছেন। এর মাঝে এই উটকো লোকটা পিছ ছাড়ছে না। সব মিলিয়ে ভীষন অস্থির লাগতে থাকে আমার।
বুড়োটা আবারও হাসছে। দেখে কেমন জানি বুকের ভেতরটা হিম হয়ে গেল।
' তা ঠিক। আমি জানি তুমি উত্তরটা খুঁজে পাওনি। কিন্তু আমি তো পেয়েছি। তুমি বসে ছিলে যেখানে তার পিছনেই আমি বসে ছিলাম। তোমার সাথে সাথে আমিও ভাবছিলাম খুব। আলো আর অন্ধকার তো আসলে হাত ধরাধরি করে হাঁটে। আলো যতটা উজ্জ্বল অন্ধকার ততটাই নিকষ। আর বিবর্নতার সাথে আসলে দুঃসময়ের বন্ধুত্ব বুঝলে? তবে তোমার চারপাশে অন্ধকার এমন জাকিয়ে বসে আছে যে আলো বেচারা কাছে ঘেঁসতেই পারছে না। তাই আমি ভাবছিলাম যে তোমার সাথে একটু আলো আর অন্ধকার লেনদেন করব। আমারও হঠাৎ করেই কিছু অন্ধকারের প্রয়োজন হয়ে পড়ল। নেবে নাকি একটু আলো?'
কি বলছে কি লোকটা এইসব?! বুড়োটা নির্ঘাত পাগল। কোন কুকক্ষণে পার্কে ঢুকেছিলাম আমি! এই ফ্যাসাদের হাত থেকে বাঁচা যায় কি করে এসব ভাবতে না ভাবতেই লোকটা আবার কথা বলে ওঠে।
'ভাবছো মাথা খারাপ হলো নাকি? শোন মেয়ে তোমাকে যে আলো দেবো তা এই পৃথিবীর খুব কম মানুষকেই দিয়েছি। নরম আর উষ্ণ। আছে অবশ্য অল্পই। গত কয়েক দশকের লেনদেন শেষে আসলে এইটুকুই রয়ে গেছিল। তবে ভয় পেয়ো না। তোমায় ঠকাচ্ছি না। তোমার অন্ধকারটুকু কেনার মত আলো আমার আছে। এখন তাড়াতাড়ি বল নেবে কি না?'
লোকটা যে আসলেই উন্মাদ এই বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে গেলাম। কথা না বাড়িয়ে যা বলে তা মেনে নেয়াই মঙ্গলজনক মনে হলো আমার কাছে। তাই কোনমতে ঢোক গিলে ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানাই।
বুড়োটা ভীষন খুশি যায়। পকেট থেকে কি যেন বের করে হাতের মাঝে গুঁজে দিল। আর ঠিক তক্ষুনি কোথা থেকে একটা বাস এসে দাঁড়ালো হুস করে। কালক্ষেপন না করে বাসে উঠে পড়ি। এইরকম নির্জন জায়গায় আর জীবনেও আসব না। অন্তত এই সময় না। খুব শিক্ষা হয়েছে আজ। বাস চলতে শুরু করায় হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। কি মনে হতে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাই। বুড়োটা কোথাও নেই। এতক্ষণে হাতের দিকে নজর গেল। এখনও মুঠি করে আছি। আস্তে আস্তে মুঠি খুলি। ফাঁকা! কিছু নেই। ফিক করে হেসে ফেলি। দূর! আমারও মাথা খারাপ হয়েছিল লোকটার কথা শুনে। কেমন জানি বিশ্বাসও হচ্ছিল যে কিছু একটা আছে বুঝি।

দু'দিন পর। সকালবেলা কাজে যাবার জন্য বাড়ী থেকে বেরোতেই দেখি পিয়ন আসছে এদিকেই। আমার হাতে একটা হলুদ খাম ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল। কেন জানি গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। কাঁপা কাঁপা হাতে খামটা খুলি। এপয়েনমেন্ট লেটার! খুব বড় একটা কোম্পানীতে মাস কয়েক আগে একটা ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম। চাকরী হবার আশা একদমই ছিল না। কেমন করে এটা সম্ভব হলো বুঝতে পারছি না। অত্যন্ত ভাল বেতন অফার করছে ওরা আর খুব শীঘ্রি জয়েন করার অনুরোধ জানিয়েছে। বুকের ভেতর কেমন জানি উষ্ণতা অনুভব করি। চারপাশটা যেন হঠাৎ করেই আলোয় আলোয় ভরে গেল। ঝাপসা চোখে দেখি ভেসে যাচ্ছি এক পবিত্র নরম আলোর বন্যায়...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন