সবাই বলে, আমি নাকি অত্যাধিক সুন্দরি।
কথাটা মিথ্যা না। আমি সত্যি সুন্দর ।
আমার গায়ে কোনো ঘা নেই। একেবারে ফ্রেশ।আমার চোখ অত্যন্ত মায়াবী।
যে দেখে সেই তাকিয়ে থাকে।
পাশের এলাকার ওই লম্বুটা এমন ভাবে তাকায়। তার আর কি বলব।
আমার ওকে একদম ভালো লাগেনা। খুব বেয়াদব।খুব। আমার বান্ধবির বড় বোনের সাথে উলটো পালটা কি যেন করে,বাবা ওকে একদম দেখতে পারেনা।
মা ওর থেকে দূরে থাকতে বলেছে।
কিন্তু ছেলেটা ফাজিল একদম পিছন ছাড়েনা।যেখানে যাই পিছন পিছন যায়।
পানি খেতে ঝরনা এলাকায় গেলে,সে পিছু পিছু যায়।সে নেতা টাইপের তাই,তাকে কেউ কিছু বলেনা।
আমি তাকে পছন্দ করিনা, আমার এক বান্ধবি তাকে খুব পছন্দ করে।কি দেখে যে পছন্দ করে।
আমি একজনকে পছন্দ করি, তার নাম পাঞ্চি, সে খুব সুন্দর।চোখ গুলো বড় বড়।হাসলে যে সুন্দর লাগে।
আমাদের হরিণ সমাজে সবথেকে সুন্দর সে।সেও আমাকে ভালোবাসে।
জোৎন্মা রাতে সে আমাকে বলেছে।
জ্যোৎস্না রাতে কেউ মিথ্যে বলেনা।
সে আমার সাথে আজ দেখা করতে আসবে।
আমি ঝরনার পাশে তার জন্য অপেক্ষা করছি।
বেশি সাজতে পারিনি।পাশের ফুলের বনে গিয়ে কিছুক্ষন গড়াগড়ি করে আসলাম।গা দিয়ে ভাল গন্ধ বেরোচ্ছে।
তার অনেক ভালো লাগবে।
………………।
তার সাথে আমার দেখে হয়েছে।সে আসতে দেরি করেছে।
তার মামাতো ভাইকে নাকি মহারাজার এক সেপাহি ধরে নিয়ে গেছে।
আমাদের সমাজ একদম ভালনা। রাজারা সবাই নিষ্ঠুর। হরিন
প্রজাদের খায়। এটা ঠিক না।
সে আমার জন্য একটা গাছের ছাল এনেছে। খুব সুন্দর।রসে ভরা। নাম বলেনি। উওরের বন থেকে এনেছে।
সে খুব ভিতু।
একবার তামাশা করে বললাম যে, দেখেন রাজার সেপাহি এসেছে।বলতেই, সে যে কি ভয় পেয়েছে।
তার সিং গুলো অনেক সুন্দর।
আমি যতক্ষন বাসায় না এসেছি,সে দূর থেকে ততক্ষন আমাকে দেখছে। সে আমায় খুব ভালোবাসে।
……………।
বাবা বাসায় এসেছে। খাবারের খোজে গিয়েছিল।
আমায় দেখে একটা মিস্টি হাসি দিয়ে বাবা ঘরে চলে গেল।
আমার ছোট ভাইটা দিন দিন নস্ট হয়ে যাচ্ছে ওই লম্বুর সাথে মিশে। বাবাকে বুঝায় যে, সে খাবারের খোজে যায়। কই যে যায়
কে জানে?
মাকে আমি পাঞ্চির কথা বলেছি।
মা তো অবাক, ওই সুন্দর ছেলে তোর সাথে প্রেম করে!
বিশ্বাসই করলনা।
………………।।
সকাল থেকে মন খারাপ। আমি আর কাদতে পারছিনা।
মা এখনো কাদছে।
ভাইটার যেন কিছুই হয় নি।
আমি যদি কোনোদিনও ক্ষমতা পাই, তাহলে সব রাজাদের ধংস করে দেব। তারা ভালোনা, একদম ভালোনা। তারা আজ আমার বাবাকে মেরে ফেলেছে।তারা খুব খারাপ।
বাবা নেই, এখন আমাদের কি হবে।
ভাইটারে দিয়ে কিছুই হবেনা। তার কাজ সারাদিন ঘোরা।
আমি যুবতি মেয়ে।খাবা্রের খোজে আমাকে কিছুতেই বের হতে দেবেনা।
দল ধরে খেতে গেলে মেয়েদের কম দেওয়া হয়।
পুরুষরা বেশি খায়। তার খুব পরিশ্রম করে। তাই।
পাঞ্চি কিছু খাবার দিয়েছে, তাই দিয়ে দিন কয়েক চলেছে।
তার বাবার আবার প্রচুর রাগ।সে পাঞ্চিকে আমাদের কাছে আসতে নিশেধ করেছে।পাঞ্চি তার বাবাকে খুব ভয় পায়।
রাজাদের চেয়েও বেশি।
শেষমেষ মা’ই নামলো খাবারের খোজে।
…………………।
আমি কোথায় যাব। আমার যাওয়ার কোন জায়গা নেই। আর এখানে এভাবে থাকা সম্ভব না।একা একা এক গুহায় বেশিক্ষন থাকা যায়না।
মাকে আজ নিয়ে গেছে, আমার খুব রাগ হচ্ছে ওই দুপায়ি প্রানিগুলোর উপর।
তারা খুব ভয়ংকর। রাজাদের চেয়েও।তাদের হাতে যেন কি একটা থাকে, তা দিয়ে খুবজোর শব্দ হয়।আর সাথে সাথে মরে যায় হরিনরা।এরা খুব খারাপ।
ভাইটাও আসছে না । একা একা খুব ভয় লাগছে।
একটু আগে লম্বুটা এসেছিল।
আবার চলে গেছে।
আমি ওকে খুব ভয় পাই।
……………।
লম্বুর সাথে শিকারে গিয়ে আমার ভাইটাও আজ মারা গেছে,
আমি হয়ে গেলাম বড় একা। নিস্ব।
আমকে দেখার মত কেউ রইলনা।
না আছে। পাঞ্চি আছে।
আজ রাতেই পাঞ্চির সাথে দেখা করতে হবে।
আমি খবর পাঠালাম।
………………
সে আসেনি।সেও আমার সাথে এমন করলো!
………………
দুপুরে, আমি আর থাকতে পারলাম না। পাঞ্চির কাছে ছুটে গেলাম।
ওর বাবা কাছে ছিল। তারপরও আমি গেলাম। এখন ভয় পেলে চলবে না।বাবা আমাকে বকা দিলো। পাঞ্চিকেও বকা দিল
বলল ‘এই মেয়ে ভালনা। রাতে গুহায় একা থাকে, ওর গুহার কাছে আমি ওই লম্বুটাকে ঘোরা ঘুরি করতে দেখেছি।
তুমি আর ওর সাথে মিশবেনা’।
আমার খুব খারাপ লাগল।
কারন আমি জানি, পাঞ্চি ওর বাবার কথা ছাড়া কিছুই করবেনা।
তাহলে আমার আর কিছুই থাকলো না।
……………।
ভিড় আমার ভাল লাগেনা।তাই দূরে বসে আছি।আমার আর বেচে থেকে লাভ কি, আমাকে দেখার মতো কেউই নেই।
যার কেউ নেই তার বাচতে নেই।
কিন্তু আমার বেচে থাকার খুব ইচ্ছা।
আমার একটা সপ্ন আছে।
আমার স্বামি থাকবে,দূটো সন্তান থাকবে। আমি আর আমার স্বামি তাদের নিয়ে উত্তরের বনে খাবার আনতে যাব।
ফুলবনে গড়াগড়ি করব।
কিছুই কি পুরন হবেনা?
……………
লম্বুটা এখানে কি চায়?
আমার খুব ভয় করছে।
সে ধিরে ধিরে আমার দিকে এগিয়ে আসছে।
তার চোখ দুটো জলছে।
সে দৌড় দিল।
আমার উপর ঝাপিয়ে পড়ল।
হঠাৎ করে সে আমার পিঠে উঠে গেলো।
প্রচন্ড ব্যাথায় আমার সারা শরির অবশ হয়ে গেল।
প্রথমে অনেকক্ষন তার থেকে বাচার চেস্টা করলাম।
শেষ রক্ষা হয়নি।পরে আর বাধা দেই নি।
সে তার চাহিদা মিটিয়ে আমায় ছেড়ে চলে গেল।
আমি জানি এসব পাঞ্চি দেখেছে।
তার নিশ্চিই খুব কস্ট লেগেছে।
কস্ট ভালনা। একদম ভাল না।
…………।।
আমি যাচ্ছি ,সব ছেড়ে যাচ্ছি।
দক্ষিনের দিকে যাচ্ছি।
সেখনে রাজারা থাকে।
বিঃদ্র= একদিন ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে দেখলাম, সিংহের তাড়া খেয়ে সকল হরিন দৌড়াচ্ছে, একটা উল্টো। সে সিংহের দিকেই
যাচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন