১ম……।
ডাঃ মারুফ চেয়ারে হেলিয়ে আছে। আজ তার মনটা বেশি ভালোনা।রাত বাজে ৩টা। মাত্রই একটা অপারেশন করে আসলো।এখন একটু বিশ্রাম দরকার।
আর একটু হেলে, মারুফ একটা সিগারেট জালালো। টানা ৩০ সেকেন্ড টানলো। তারপর এক গাল ধোয়া ছাড়লো।
রিতার কথা খুব মনে পড়ছে।রিতা নাকি বাংলাদেশ এসেছে।সাথে স্বামি আর ৪ বছরের বাচ্চা।
একবার দেখাও কি করবেনা?
মারুফ ভাবল,রিতা না এসে থাকতে পারবেনা।পরক্ষনেই ভাবলো, রিতার দ্বারা সব সম্ভব। তা না হলে কি আর ৮ বছর আগে ৪ বছরের ভালবাসা শেষ করে দিয়ে কেউ চলে যায়। ভাবতে ভাবতে হালকা তন্দ্রায় গেলো সে।
২য়……………
রিতা আর মারুফের ৪ বছর প্রেম ছিল। বিয়ে হয়নি। মারুফের প্রবল ইছছা শক্তি,রিতার অনিছ্ছার কাছে হেরে যায়।
রিতার যখন বিয়ে ঠিক, তখন মারুফ বেকার।বেকারত্তই রিতার অনিছছার কারন।
রিতাও মারুফকে প্রচন্ড রকমের ভালবাসত। কিন্তু নিয়তি।কি আর করতে পারতো সে। পালিয়ে যেতে পারতো মারুফের সাথে।তারপর। আবারতো ফিরে আসতে হতো বাবা মায়ের কাছে।
তাই সব দিক চিন্তা করেই ওকে বিয়ে না করার সিধান্ত নেয় রিতা।
রাসেল নামের একটা ছেলের সাথে বিয়ে হয় রিতার। বিয়ের
৩ মাসের মধ্য ওরা কানাডা চলে যায়।
তারপর মারুফ একা একা নিজের জীবন সাজায়।হয়তো
কোনোদিন ফিরে আসবে রিতা,
আবার শুরু হবে সেই মধুর দিন গুলো।
৩য়………।।
অপেক্ষা করতে করতে প্রায় ৮ বছর কেটে গেল ।গতকাল ঢাকায় এসেছে রিতা।রিতার এক বান্ধবি জানিয়েছে মারুফকে।মারুফ অপেক্ষায় আছে, কখন আসবে রিতা ।
এসে বলবে, ‘চল মারুফ আমরা নতুন করে জীবন শুরু করি’।
এসবই ভাবছিলো মারুফ।
৪র্থ……………।।
চেম্বারের দরজা নক করার শব্দে ঘোর ভাঙলো মারুফের।
‘আসতে পারি’ মেয়ে কন্ঠের প্রশ্ন।
এতো রাতে আবার কে?
কোনো রুগির আত্মীয় হবে হয়তো। এরা যা জালায় না।
ভাবছে মারুফ।
‘জি’ মারুফ বলল।
লাল শাড়ি পড়া একটা মেয়ে ভিতরে ঢুকলো।মারুফ অবাক তাকিয়ে রয়েছে।
রিতা একটু ও বদলাইনি। শেষবার যেমন দেখেছে এবারও ঠিক তেমনই আছে।
‘কেমন আছ তুমি’ রিতা বলল।
‘যেমন রেখেছ’ মারুফ বলল।
‘মানে কি?’
‘সবাই এক রকম না।তুমি আমায় ভুলে গেলেও আমি তোমায় ভুলতে পারিনি’।
‘আমি ভুলে গেছি, কে বলল?’
‘ না ভুলে গেলে এতদিন পর খবর নিলে। একটা ফোনও করা যেত’
‘ বিয়ে করোনি কেন?’
‘ তোমার জন্য’
‘ মানে কি?’
‘তুমি আবার ফিরে আসবে।সেই আশায় বিয়ে করিনি’
‘কিন্তু সে আশাতো পুরন হবেনা’
‘জানি।তোমার কথা শুনে বোঝা যাছ্ছে’
‘তোমার খবর কি বল?’ রিতা বলল।
‘এতক্ষন কি বললাম?’
‘কেমন আছ তুমি?’
‘ভাল,তুমি কি কারনে এসেছো?’
‘ক্ষমা চাইতে’
‘বুঝলাম না?’
‘আমি তোমায় অনেক কষ্ট দিয়েছি যা আমার একদম ঠিক হয়নি’
‘তুমি আমায় কেন কস্ট দিবে? তুমি তোমার সুখ দেখেছ।
আর দশটা মানুষ যা করতো তুমিও তাই করেছো।এতে আবার
ক্ষমা চাওয়ার কি আছে?’
‘তার মানে আমা্র চলে যাওয়াতে তুমি কোনো কস্ট পাওনি’।
মারুফ মাথা নাড়াল।
‘তাহলে আমার জন্য অপেক্ষা করে আছ কেন?’
‘রিতা তুমি খুব ভাল করে জান, আমি প্লান ছাড়া কোনো কাজ করিনা। আমার সংসার জীবনটা তোমায় নিয়ে প্লান করা ছিল। তুমি নেই তাই সংসারও নেই’।
‘আমার কথার জবাব দাও’।
‘ওকে। আমার কেন যেন মনে হতো তুমি একদিন আমার কাছে ফিরে আসবে।এসে বলবে,
“মারুফ আসো আমরা সব ঠিক করে ফেলি” ’।
‘আর সেই অপেক্ষায় তুমি বিয়ে না করে কাটিয়ে দিলে’
‘হুম’ মারুফ হালকা সুরে বলল।
‘ভাল কথা, তা এভাবে আর কতোদিন অপেক্ষা করবে তুমি? আমি বুঝিনা তুমি এমন একটা সিদ্ধান্ত নিলে কিভাবে? আমিতো বেশ সুখি আছি।তুমি কেন নিজেকে কষ্ট দিছছ?’
‘ আমার অপরাধ বোধ কাজ করে।আমার এ হাত অন্য কাউকে স্পর্শ করতে পারেনা।
আজও তোমার গন্ধ লেগে আছে আমার গায়ে। আমি অনুভব করি।আর সেজন্যই এই সীদ্ধান্ত’
কথাটা যেন বোমা ফাটালো, দুজনেই চুপ।হঠাৎ রিতা উঠে দাড়াল, চেম্বার রুমের এক কোনায় গিয়ে দাড়ালো।এতক্ষনে মারুফ খেয়াল করলো, রিতা ওর ঠিক সামনে বসে আছে। দরজাটাও খোলা। এখন মারুফের অফ টাইম। তারপরও রাত বাজে ৩টা।এতো রাতে একটা মেয়ে নিয়ে বসে গল্প করা ভালো দেখায় না।
রিতা সরে যাওয়াতে মারুফ মনে মনে খুশি হলো। মারুফ উঠে গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিল। রিতার সামনে গিয়ে দাড়াল। রিতা দেয়াল ঘেসে দাঁড়িয়ে আছে।
‘ বুকে হাত রেখে বল তুমি কি আমায় ভুলতে পেড়েছো?’ মারুফ বলল।
‘ আমার পড়ার টেবিলে তোমার নাম লেখা ছিল, সেটা আজ এতো বছর পরও মুছে যায়নি। হৃদয়ের চিণ্হ কিভাবে মুছে যাবে’ রিতা বলল।
মারুফ এতো সুন্দর কথা জিবনে শোনেনি। এটা যে কেউ ওর মুখ দেখলেই বুঝতে পারতো।
মারুফ রিতার চুলে হাত দিলো।চুল সরিয়ে দিলো, মুখের উপর থেকে।
মারুফ যেন হারিয়ে গেল, নতুন কোনো জগতে, নতুন কোনো মায়াতে।
দরজা নকের শব্দে মারুফের ঘোর ভাঙলো।
‘কে?’
‘স্যার আমি রানা। নতুন একটা রুগি এসেছে, একটু দেখবেন?’
‘ না তুমি দেখ। লেখা পড়া করোনি জিবনে?’
অন্য সময় হলে মারুফ ঠিকই যেত। এখন রিতা পাশে, কতোদিন পর এই মানুষটার দেখা পেল সে। এই সময়টার জন্য কতো অপেক্ষা। কতো প্রার্থনা।সব কিছু শেষে তার মনের মানুষটা আজ তার পাশে । যে কোনো কিছুর বিনিময়ে সে এই সময়টাকে বৃথা হতে দেবেনা । হয়তো এ সময়টাকে মনে করে বাকি জীবনটা কাটাতে হবে তার।
রিতা ততক্ষনে মারুফের হাত সরিয়ে দিয়েছে।
‘ ভুলে যেওনা মারুফ, আমি একজনের মা’ রিতা বলল।
মারুফ মনে মনে খুব লজ্জা পেল। কতটা আবাগী সে হয়ে পরেছিল।
‘ তোমার বাচ্চা কেমন আছে?’
‘ ভাল না। কাদছে……’
‘ কাদে কেন?’
‘ সেটা তোমার না জানলেও চলবে’
‘ তোমার স্বামি?’
‘ সে নির্বাক……’
‘ মানে কি?’
‘সেটা তোমার না জানলেও চলবে’
‘ তোমার ফ্যামেলির খবর কি?’
‘ তারাও কাদছে……’
‘ কিসব উদ্ভট উত্তর দিছছ তুমি’
‘ তারা এখন কাদছে । আর আমি তাই বললাম’
‘ তুমি কিভাবে জানো যে তারা কাদছে?’
‘ আমি দেখেছি’
‘ ও মাই গড । আমি মনে হয়, বুঝতে পারছি। তুমি আমার জন্য তোমা্র স্বামিকে ছেড়ে চলে এসেছো। এতে তোমার ফ্যামেলি বাধা দিলে তুমি তাদেরকেও ছেড়ে এসেছো। আর এজন্যই সবাই কাদছে’
‘ এমন হলে খুব ভালো হতো। তাইনা মারুফ’
আবার দরজার শব্দে ওদের কথায় ভাটা পড়লো।
‘স্যার তাড়াতাড়ি বাইরে আসেন। একজন মারান্তক রুগি এসেছে।খুব খারাপ অবস্থা’
‘ তুমি যাও আমি এখন ব্যস্ত’
হঠাত করেই রিতাকে খুব অস্থির মনে হল।সে মারুফ কে বলল‘ তুমি যাও মারুফ’
‘ না আমি যাবনা। আমি গেলেই তুমি চলে যাবে’
‘ তুমি যাও মারুফ, তুমি যাও’
‘ না না না’
‘ স্যার রুগির নার্ভ ধিরে ধিরে কমে আসছে। মনে হয় বাচানো যাবেনা। আপনি একটু দেখে যান’
‘ তুমি যাও মারুফ। যলদি যাও । বাচাও। জীবন বাচাও’
‘ কিন্তু আমি গেলেইতো তুমি চলে যাবে’
‘ না আমি যাবনা’
‘ আমি তোমায় বিশ্বাস করিনা। তুমি আমায় বলে ছিলে আমার ছাড়া আর কারও হবেনা’
‘ তোমার পায়ে ধরি তুমি যাও’
‘ তাহলে আমার মাথায় হাত দিয়ে কসম কাটো, তুমি যাবেনা’
রিতা তাই করল। ওদিক কমপাউন্ডার ডেকেই চলছে।
মারুফ দরজা খুলেই দৌড় দিল। পাশের কেবিনে রুগি। মারুফ কেবিনে ঢুকে রুগির দিকে না তাকিয়েই তার হাত ধরলো। রুগির দিকে তার কোনো খেয়াল নেই। সে তাকিয়ে আছে তার চেম্বারের দিকে।এখান থেকে রিতার আচল দেখা যাছছে।
এবার সে মনোযোগ দিল রুগির দিকে। নার্ভটা ধিরে ধিরে কমে যাছছে।
মারুফ রুগির মুখের দিকে তাকাল। চোখের সামনে যবাই করা দেখলেও মানুষ এতো অবাক হয়না, মারুফ যতোটা হলো।
এটা যদি রিতা হয় তাহলে ওটা কে?
ওটা যদি রিতা হয় তাহলে এটা কে?
মারুফ বুঝতে পারলো।
মনে মনে বলল, তোমার কিছু হবেনা, আমি আছিনা।
তুমি আমায় ছেড়ে যাবেনা । যেতে পারোনা। আমি তোমায় যেতে দিবোনা।
মারুফ নার্ভটা আরেকবার পরিক্ষা করলো। কিন্তু এবার আর সেটার অস্তিত্ত পাওয়া গেল না । মারুফ হাত টা ছেড়ে দিল। যেন গরমে ছ্যাকা খেয়েছে।
নার্স এসে নাকে অক্সিজেন লাগালো। কোনো কাজ হলনা।
শেষে সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে,দিল রিতার মুখ।
৫ম…………।।
মারুফ কেবিন থেকে বেরিয়ে আসলো। দেখলো, রিতা করিডোর দিয়ে হেটে চলে যাছছে। মারুফের ডাক অগ্রায্য করে। রিতা হাটতে হাটতে জালনা দিয়ে বের হয়ে গেল।
নিচে যায়নি। উপরে উড়ে গেলো।
মারুফ করিডোরে বসে পড়লো।বিশ্বাস করতে কস্ট হছছে ওর।
রিতা তাহলে চলে গেল।
কথা রাখলো না।
প্রথম রিতা কথা রাখেনি, অন্য কারও হাত ধরে চলে গেল অনেক দূর।
দ্বিতিয় রিতাও কথা রাখনি, চলে গেল…।
না এটাতো হতে পারেনা। রিতা তার আগে চলে যাবে এতা কিভাব হয়।
মারুফের অটল বিশ্বাস রিতা আবার আসবে। বলবে ‘ এসো মারুফ আমরা সব ঠিক করে ফেলি’।
এখন শুধু অপেক্ষা ।
তৃতীয় তার অপেক্ষা
ডাঃ মারুফ চেয়ারে হেলিয়ে আছে। আজ তার মনটা বেশি ভালোনা।রাত বাজে ৩টা। মাত্রই একটা অপারেশন করে আসলো।এখন একটু বিশ্রাম দরকার।
আর একটু হেলে, মারুফ একটা সিগারেট জালালো। টানা ৩০ সেকেন্ড টানলো। তারপর এক গাল ধোয়া ছাড়লো।
রিতার কথা খুব মনে পড়ছে।রিতা নাকি বাংলাদেশ এসেছে।সাথে স্বামি আর ৪ বছরের বাচ্চা।
একবার দেখাও কি করবেনা?
মারুফ ভাবল,রিতা না এসে থাকতে পারবেনা।পরক্ষনেই ভাবলো, রিতার দ্বারা সব সম্ভব। তা না হলে কি আর ৮ বছর আগে ৪ বছরের ভালবাসা শেষ করে দিয়ে কেউ চলে যায়। ভাবতে ভাবতে হালকা তন্দ্রায় গেলো সে।
২য়……………
রিতা আর মারুফের ৪ বছর প্রেম ছিল। বিয়ে হয়নি। মারুফের প্রবল ইছছা শক্তি,রিতার অনিছ্ছার কাছে হেরে যায়।
রিতার যখন বিয়ে ঠিক, তখন মারুফ বেকার।বেকারত্তই রিতার অনিছছার কারন।
রিতাও মারুফকে প্রচন্ড রকমের ভালবাসত। কিন্তু নিয়তি।কি আর করতে পারতো সে। পালিয়ে যেতে পারতো মারুফের সাথে।তারপর। আবারতো ফিরে আসতে হতো বাবা মায়ের কাছে।
তাই সব দিক চিন্তা করেই ওকে বিয়ে না করার সিধান্ত নেয় রিতা।
রাসেল নামের একটা ছেলের সাথে বিয়ে হয় রিতার। বিয়ের
৩ মাসের মধ্য ওরা কানাডা চলে যায়।
তারপর মারুফ একা একা নিজের জীবন সাজায়।হয়তো
কোনোদিন ফিরে আসবে রিতা,
আবার শুরু হবে সেই মধুর দিন গুলো।
৩য়………।।
অপেক্ষা করতে করতে প্রায় ৮ বছর কেটে গেল ।গতকাল ঢাকায় এসেছে রিতা।রিতার এক বান্ধবি জানিয়েছে মারুফকে।মারুফ অপেক্ষায় আছে, কখন আসবে রিতা ।
এসে বলবে, ‘চল মারুফ আমরা নতুন করে জীবন শুরু করি’।
এসবই ভাবছিলো মারুফ।
৪র্থ……………।।
চেম্বারের দরজা নক করার শব্দে ঘোর ভাঙলো মারুফের।
‘আসতে পারি’ মেয়ে কন্ঠের প্রশ্ন।
এতো রাতে আবার কে?
কোনো রুগির আত্মীয় হবে হয়তো। এরা যা জালায় না।
ভাবছে মারুফ।
‘জি’ মারুফ বলল।
লাল শাড়ি পড়া একটা মেয়ে ভিতরে ঢুকলো।মারুফ অবাক তাকিয়ে রয়েছে।
রিতা একটু ও বদলাইনি। শেষবার যেমন দেখেছে এবারও ঠিক তেমনই আছে।
‘কেমন আছ তুমি’ রিতা বলল।
‘যেমন রেখেছ’ মারুফ বলল।
‘মানে কি?’
‘সবাই এক রকম না।তুমি আমায় ভুলে গেলেও আমি তোমায় ভুলতে পারিনি’।
‘আমি ভুলে গেছি, কে বলল?’
‘ না ভুলে গেলে এতদিন পর খবর নিলে। একটা ফোনও করা যেত’
‘ বিয়ে করোনি কেন?’
‘ তোমার জন্য’
‘ মানে কি?’
‘তুমি আবার ফিরে আসবে।সেই আশায় বিয়ে করিনি’
‘কিন্তু সে আশাতো পুরন হবেনা’
‘জানি।তোমার কথা শুনে বোঝা যাছ্ছে’
‘তোমার খবর কি বল?’ রিতা বলল।
‘এতক্ষন কি বললাম?’
‘কেমন আছ তুমি?’
‘ভাল,তুমি কি কারনে এসেছো?’
‘ক্ষমা চাইতে’
‘বুঝলাম না?’
‘আমি তোমায় অনেক কষ্ট দিয়েছি যা আমার একদম ঠিক হয়নি’
‘তুমি আমায় কেন কস্ট দিবে? তুমি তোমার সুখ দেখেছ।
আর দশটা মানুষ যা করতো তুমিও তাই করেছো।এতে আবার
ক্ষমা চাওয়ার কি আছে?’
‘তার মানে আমা্র চলে যাওয়াতে তুমি কোনো কস্ট পাওনি’।
মারুফ মাথা নাড়াল।
‘তাহলে আমার জন্য অপেক্ষা করে আছ কেন?’
‘রিতা তুমি খুব ভাল করে জান, আমি প্লান ছাড়া কোনো কাজ করিনা। আমার সংসার জীবনটা তোমায় নিয়ে প্লান করা ছিল। তুমি নেই তাই সংসারও নেই’।
‘আমার কথার জবাব দাও’।
‘ওকে। আমার কেন যেন মনে হতো তুমি একদিন আমার কাছে ফিরে আসবে।এসে বলবে,
“মারুফ আসো আমরা সব ঠিক করে ফেলি” ’।
‘আর সেই অপেক্ষায় তুমি বিয়ে না করে কাটিয়ে দিলে’
‘হুম’ মারুফ হালকা সুরে বলল।
‘ভাল কথা, তা এভাবে আর কতোদিন অপেক্ষা করবে তুমি? আমি বুঝিনা তুমি এমন একটা সিদ্ধান্ত নিলে কিভাবে? আমিতো বেশ সুখি আছি।তুমি কেন নিজেকে কষ্ট দিছছ?’
‘ আমার অপরাধ বোধ কাজ করে।আমার এ হাত অন্য কাউকে স্পর্শ করতে পারেনা।
আজও তোমার গন্ধ লেগে আছে আমার গায়ে। আমি অনুভব করি।আর সেজন্যই এই সীদ্ধান্ত’
কথাটা যেন বোমা ফাটালো, দুজনেই চুপ।হঠাৎ রিতা উঠে দাড়াল, চেম্বার রুমের এক কোনায় গিয়ে দাড়ালো।এতক্ষনে মারুফ খেয়াল করলো, রিতা ওর ঠিক সামনে বসে আছে। দরজাটাও খোলা। এখন মারুফের অফ টাইম। তারপরও রাত বাজে ৩টা।এতো রাতে একটা মেয়ে নিয়ে বসে গল্প করা ভালো দেখায় না।
রিতা সরে যাওয়াতে মারুফ মনে মনে খুশি হলো। মারুফ উঠে গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিল। রিতার সামনে গিয়ে দাড়াল। রিতা দেয়াল ঘেসে দাঁড়িয়ে আছে।
‘ বুকে হাত রেখে বল তুমি কি আমায় ভুলতে পেড়েছো?’ মারুফ বলল।
‘ আমার পড়ার টেবিলে তোমার নাম লেখা ছিল, সেটা আজ এতো বছর পরও মুছে যায়নি। হৃদয়ের চিণ্হ কিভাবে মুছে যাবে’ রিতা বলল।
মারুফ এতো সুন্দর কথা জিবনে শোনেনি। এটা যে কেউ ওর মুখ দেখলেই বুঝতে পারতো।
মারুফ রিতার চুলে হাত দিলো।চুল সরিয়ে দিলো, মুখের উপর থেকে।
মারুফ যেন হারিয়ে গেল, নতুন কোনো জগতে, নতুন কোনো মায়াতে।
দরজা নকের শব্দে মারুফের ঘোর ভাঙলো।
‘কে?’
‘স্যার আমি রানা। নতুন একটা রুগি এসেছে, একটু দেখবেন?’
‘ না তুমি দেখ। লেখা পড়া করোনি জিবনে?’
অন্য সময় হলে মারুফ ঠিকই যেত। এখন রিতা পাশে, কতোদিন পর এই মানুষটার দেখা পেল সে। এই সময়টার জন্য কতো অপেক্ষা। কতো প্রার্থনা।সব কিছু শেষে তার মনের মানুষটা আজ তার পাশে । যে কোনো কিছুর বিনিময়ে সে এই সময়টাকে বৃথা হতে দেবেনা । হয়তো এ সময়টাকে মনে করে বাকি জীবনটা কাটাতে হবে তার।
রিতা ততক্ষনে মারুফের হাত সরিয়ে দিয়েছে।
‘ ভুলে যেওনা মারুফ, আমি একজনের মা’ রিতা বলল।
মারুফ মনে মনে খুব লজ্জা পেল। কতটা আবাগী সে হয়ে পরেছিল।
‘ তোমার বাচ্চা কেমন আছে?’
‘ ভাল না। কাদছে……’
‘ কাদে কেন?’
‘ সেটা তোমার না জানলেও চলবে’
‘ তোমার স্বামি?’
‘ সে নির্বাক……’
‘ মানে কি?’
‘সেটা তোমার না জানলেও চলবে’
‘ তোমার ফ্যামেলির খবর কি?’
‘ তারাও কাদছে……’
‘ কিসব উদ্ভট উত্তর দিছছ তুমি’
‘ তারা এখন কাদছে । আর আমি তাই বললাম’
‘ তুমি কিভাবে জানো যে তারা কাদছে?’
‘ আমি দেখেছি’
‘ ও মাই গড । আমি মনে হয়, বুঝতে পারছি। তুমি আমার জন্য তোমা্র স্বামিকে ছেড়ে চলে এসেছো। এতে তোমার ফ্যামেলি বাধা দিলে তুমি তাদেরকেও ছেড়ে এসেছো। আর এজন্যই সবাই কাদছে’
‘ এমন হলে খুব ভালো হতো। তাইনা মারুফ’
আবার দরজার শব্দে ওদের কথায় ভাটা পড়লো।
‘স্যার তাড়াতাড়ি বাইরে আসেন। একজন মারান্তক রুগি এসেছে।খুব খারাপ অবস্থা’
‘ তুমি যাও আমি এখন ব্যস্ত’
হঠাত করেই রিতাকে খুব অস্থির মনে হল।সে মারুফ কে বলল‘ তুমি যাও মারুফ’
‘ না আমি যাবনা। আমি গেলেই তুমি চলে যাবে’
‘ তুমি যাও মারুফ, তুমি যাও’
‘ না না না’
‘ স্যার রুগির নার্ভ ধিরে ধিরে কমে আসছে। মনে হয় বাচানো যাবেনা। আপনি একটু দেখে যান’
‘ তুমি যাও মারুফ। যলদি যাও । বাচাও। জীবন বাচাও’
‘ কিন্তু আমি গেলেইতো তুমি চলে যাবে’
‘ না আমি যাবনা’
‘ আমি তোমায় বিশ্বাস করিনা। তুমি আমায় বলে ছিলে আমার ছাড়া আর কারও হবেনা’
‘ তোমার পায়ে ধরি তুমি যাও’
‘ তাহলে আমার মাথায় হাত দিয়ে কসম কাটো, তুমি যাবেনা’
রিতা তাই করল। ওদিক কমপাউন্ডার ডেকেই চলছে।
মারুফ দরজা খুলেই দৌড় দিল। পাশের কেবিনে রুগি। মারুফ কেবিনে ঢুকে রুগির দিকে না তাকিয়েই তার হাত ধরলো। রুগির দিকে তার কোনো খেয়াল নেই। সে তাকিয়ে আছে তার চেম্বারের দিকে।এখান থেকে রিতার আচল দেখা যাছছে।
এবার সে মনোযোগ দিল রুগির দিকে। নার্ভটা ধিরে ধিরে কমে যাছছে।
মারুফ রুগির মুখের দিকে তাকাল। চোখের সামনে যবাই করা দেখলেও মানুষ এতো অবাক হয়না, মারুফ যতোটা হলো।
এটা যদি রিতা হয় তাহলে ওটা কে?
ওটা যদি রিতা হয় তাহলে এটা কে?
মারুফ বুঝতে পারলো।
মনে মনে বলল, তোমার কিছু হবেনা, আমি আছিনা।
তুমি আমায় ছেড়ে যাবেনা । যেতে পারোনা। আমি তোমায় যেতে দিবোনা।
মারুফ নার্ভটা আরেকবার পরিক্ষা করলো। কিন্তু এবার আর সেটার অস্তিত্ত পাওয়া গেল না । মারুফ হাত টা ছেড়ে দিল। যেন গরমে ছ্যাকা খেয়েছে।
নার্স এসে নাকে অক্সিজেন লাগালো। কোনো কাজ হলনা।
শেষে সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে,দিল রিতার মুখ।
৫ম…………।।
মারুফ কেবিন থেকে বেরিয়ে আসলো। দেখলো, রিতা করিডোর দিয়ে হেটে চলে যাছছে। মারুফের ডাক অগ্রায্য করে। রিতা হাটতে হাটতে জালনা দিয়ে বের হয়ে গেল।
নিচে যায়নি। উপরে উড়ে গেলো।
মারুফ করিডোরে বসে পড়লো।বিশ্বাস করতে কস্ট হছছে ওর।
রিতা তাহলে চলে গেল।
কথা রাখলো না।
প্রথম রিতা কথা রাখেনি, অন্য কারও হাত ধরে চলে গেল অনেক দূর।
দ্বিতিয় রিতাও কথা রাখনি, চলে গেল…।
না এটাতো হতে পারেনা। রিতা তার আগে চলে যাবে এতা কিভাব হয়।
মারুফের অটল বিশ্বাস রিতা আবার আসবে। বলবে ‘ এসো মারুফ আমরা সব ঠিক করে ফেলি’।
এখন শুধু অপেক্ষা ।
তৃতীয় তার অপেক্ষা
বিঃদ্যঃ এই গল্পটা লিখে সব থেকে বেশি মন্তব্য পেয়েছি আমি। কিন্তু মন খারাপ হল তখন কেউ একজন আমাকে জানাল যে আমি নাকি কাহিনি নকল করেছি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন